বেনাপোল প্রতিনিধি :দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে শাহজালাল নামে এক সিএন্ডএফ এজেন্টের সীল-স্বাক্ষর ও ব্যাংক ডকুমেন্টস জাল জালিয়াতি করে ভারত হতে আমদানিকৃত ১৫০ প্যাকেজ সাব মার্সিবল পাম্পের একটি পণ্য চালান গত ৬ জানুয়ারি বন্দরের ২২ নং শেড থেকে খালাস করে নিয়ে গেছে প্রতারক আমদানিকারক অমি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আশরাফ হোসেন ও তার সহযোগী সিএন্ডএফ এজেন্ট জামান এন্টারপ্রাইজের মালিক আসাদুজ্জামান মিন্টু চক্র।
এ বিষয়ে শাহজালাল সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক শাহজালাল ও আমদানিকারক অমি ইন্টারন্যাশনালের মালিক আশরাফ হোসেন জালিয়াতির অভিযোগ এনে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ, পোর্ট থানা ও সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আর এ চক্রের মুলহোতা আসাদুজ্জামান মিন্টু রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ বলছে পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছেনা।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক আশরাফ হোসেন কাস্টমসে দেয়া অভিযোগে জানা যায়, তিনি ভারত থেকে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ১৫০ প্যাকেজ সাব মার্সিবল পাম্প আমদানি করেন। যার আইজিএম নম্বর-৪৭৪৫৭-এ-বি, তারিখ-২৮/১২/২১। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লি: খুলনা শাখার ঋণ পত্র নম্বর- ২০২১২১০১০৩৫৫ তাং- ৩১/১২/২০২১। ভারতের রপ্তানিকারক মুরারি এক্সপোর্ট হাউজ, কলকাতা। পণ্য চালানটি মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ নামের এক সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক আসাদুজ্জামান মিন্টুকে রিসিভ করার দায়িত্ব দিলে, মিন্টু পণ্য চালানটি গ্রহণ করে বন্দরের ২২ নং শেডে রাখে। গত ১৭ জানুয়ারি পণ্য চালানটি দেখতে ২২ নং শেডে গেলে শেড ইনচার্জ রেজিস্টার দেখে তাকে জানায় গত ৬ জানুয়ারি মেসার্স শাহাজালাল নামের এক সিএন্ডএফ এজেন্ট আমার আমদানিকৃত পণ্যটি চালানটি খালাস করে নিয়ে গেছে।
পরবর্তীতে তিনি বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দায়ের করেন।শাহজালাল সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক শাহজালাল জানান, তার অগোচরে আমদানিকারক অমি ইন্টারন্যাশনালের মালিক আশরাফ হোসেন ও সিএন্ডএফ এজেন্ট জামান এন্টারপ্রাইজের মালিক আসাদুজ্জামান মিন্টু আমার সীল স্বাক্ষর জাল করে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে ভারত থেকে আমদানিকৃত ১৫০ প্যাকেজের সাব মার্সিবল পাম্পের একটি পণ্য চালান খালাস করে নিয়ে গেছে। আমি বিষয়টি কাস্টমস হাউজে আমার পরিচিত জনের কাছ থেকে জানতে পারি। আমি কাস্টমস হাউজে এমন পণ্যের কোন বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করিনি। ওই আমদানিকারকের সাথে আমার কোন পরিচয়ও নেই। তার সব কাজ জামান এন্টারপ্রাইজ করে থাকে। পরবর্তীতে আমি অমি ইন্টারন্যাশনালের মালিক আশরাফ হোসেনের অভিযোগ পত্রে আমার সিএন্ডএফ এজেন্টের নাম দেখতে পাই। প্রতারক আশরাফ ও মিন্টুর নামে থানায় অভিযোগ করি।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এই প্রতারক চক্র নিজেরাই ডকুমেন্টস জাল জালিয়াতি মাধ্যমে আমার প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্য ছাড় করিয়ে ৭ জানুয়ারি বেনাপোলের সেলিনা ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে যশোরের কেশবপুরে আনন্দ ট্রেডার্সের মালিক আনন্দ বাবু নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ২২ লাখ টাকায় পণ্য চালানটি বিক্রি করেছে।
কেশবপুরের আনন্দ ট্রেডার্সের মালিক আনন্দ বাবু বলেন, অমি ইন্টারন্যাশনালের মালিক আশরাফ হোসেন ও জামান এন্টারপ্রাইজের মালিক আসাদুজ্জামান মিন্টুর মধ্যে রয়েছে বাপ ও ছেলের সম্পর্ক। তারা দু‘জনে দীর্ঘদিন যাবত ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকেন। আর তার সহযোগী জামান এন্টারপ্রাইজের মালিক আসাদুজ্জামান মিন্টু এ পণ্য কাস্টমস হাউজ থেকে ছাড় করিয়ে, আশরাফ হোসেনের কথা মতো নির্দিষ্ট ঠিকানায় ব্যবসায়ীদের কাছে সাপ্লাই দেন।
আনন্দ বাবু আরো জানান, দীর্ঘদিনের ব্যবসা সূত্রে বুঝতে পারি আশরাফ হোসেন ও মিন্টু দু‘জনেই বাটপার প্রকৃতির লোক। তাদের সাথে আমার দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও লেনদেন রয়েছে। তাদের সাথে যতবারই লেনদেন করতে যাই তারা দুজনে আমার সাথে প্রতারণা করে। গত ৭ জানুয়ারি মিন্টু নিজে আমার দোকানে এসে আমার কাছে ১৫০ প্যাকেজের সাব মার্সিবল পাম্পের চালানটি রেখে দেন।
পরবর্তীতে, আশরাফ ও মিন্টু তাদের মালের দাম আমার কাছে ৩০ লাখ টাকা চান। আমি বলি ২২ লাখ টাকার মাল আমি ৩০ লাখ টাকায় নেবো কেন? পরে আশরাফ হোসেন ওই মালের বাবদ নগদ ২ লাখ ও মিন্টু ২০ লাখ টাকা আমার কাছ থেকে নেন। তাদের সাথে সমস্ত ব্যবসায়িক লেনদেনের ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে। এর আগে মিন্টু আমার কাছ থেকে মাল দিবে বলে চেক দিয়ে টাকা নিয়েছে। সেই টাকাও দেইনি। তার নামে আমি চেক ডিজঅনারের মামলা করবো। এছাড়াও আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বাটপারি করে ৪ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে।
অমি ইন্টারন্যাশনালের মালিক আশরাফ হোসেনের কাছে সিএন্ডএফ এজেন্টের জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শাহজালাল সিএন্ডএফ এজেন্টকে চিনি না। তার সাথে কখনও দেখা হয়নি। সব জালিয়াতি মিন্টু করেছে। কেশবপুরের আনন্দ বাবুর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেন। শাহজালাল সিএন্ডএফ এজেন্টের নাম ব্যবহার করেছে মিন্টু। মিন্টুর কথামত কাস্টমসে আবেদন দেওয়া হয়েছে।এ বিষয়ে জালিয়াতির মূল হোতা আসাদুজ্জামান মিন্টুর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মুঠোফোন ০১৭১২-৫৭৯৯৩৩ একাধিক বার কল করলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি পলাতক থাকায় বার বার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা জানান, শেখ আসাদুজ্জামান মিন্টু সম্পর্কে আমরা একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। সে পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছেনা। নানা জায়গায় খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি সে বড় ধরনের প্রতারক।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের বেজপাড়ার বাসিন্দা বিশ^জিৎ দাস বলেন, মিন্টুর সাথে সিএন্ডএফ ব্যবসা করতে নিজের জীবনের রক্তে ঘামানো সি ত ৪৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। সেই টাকা ফেরত দেওয়া দুরে থাক মিন্টু ও তার বাপের কাছে আমি জিম্মি হয়ে আছি। ব্যবসায়ের নামে টাকা নিয়ে মিন্টু আজ লাপাত্তা। এখন টাকা ফেরত চাইলে তারা আমাকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার টাকার সুরাহা করবে বলে তারা আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে খাওয়ায়ে তিলে তিলে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি এ যাত্রায় জীবন নিয়ে বেঁচে গেছি। মিন্টুর পরিবারের খাদ্য খেয়ে গত পাঁচ মাস আমাকে যশোরের কুইন্স হাসপাতাল তিনবার ভর্তি থাকতে হয়েছে। সর্বশেষ আমি বেনাপোল পোর্ট থানায় তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করি। ঢাকা আদালতেও একটি চেক ডিজওনার এর একটি মামলা করি। এ মামলায় গত মাসে মিন্টুর নামে ওয়ারেন্টও জারি হয়েছে বলে জানান তিনি।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নন্দীরডুমরিয়া গ্রামের আশরাফুল বলেন, এই মিন্টুর সাথে আমার শালার মাধ্যমে পরিচয় হয়। আমার শালার পরিচয় ধরে মিন্টু আমাকে একদিন কল দিয়ে তার নানা সমস্যাার কথা বলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার চান এবং ২ দিনের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ারও ওয়াদা করেন। পরে আমার শালা টাকা ধার দিতে সম্মতি জানালে আমি আমার বন্ধুর নিকট থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ধার করে মিন্টুর কাছে পৌছে দেই। টাকা নিয়ে ২ দিন পরই ফেরত দেওয়ার কথা বললেও আজ ৯ মাস যাবৎ সে আমাকে ঘোরাচ্ছে। পরে আমি আমার স্ত্রীর ৫ ভরি গহণা বন্ধক রেখে আমার বন্ধুর টাকা পরিশোধ করেছি। এই ৯ মাস যাবৎ আমি সেই টাকার সুদ বহন করছি।কেশবপুরের বরুণ রাজ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তার দোকানে আগরবাতি দেওয়ার কথা বলে ৪ লাখ টাকা মিন্টুকে দেই। কিন্তু সে এই টাকা নিয়ে এখন মালও দিচ্ছেনা আবার টাকাও দিচ্ছেনা।
Огляд ВБЕТ UA 2023. VBET UKRAINE POMOCODES та BONUS на v-bet.biz.ua. Заходьте, реєстрація в Україні. Все, що вам потрібно для успішної гри з V -BET Casino!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.