ছোটবেলায় পাখি পোষার খুব ইচ্ছে ছিলো, এখনোও যে নেই ঠিক তা না। একটু চঞ্চলমুখা ছিলাম, এই যখন সময় বৈশাখ মাসের উত্তর পশ্চিম কালো মেঘ ঝড়ো বাতাস বয়ে যাওয়া একটা সময় প্রচন্ড ঝড়ের সহীত বৃষ্টি হয়। ঠিক এই ঋতুতে পাখিদের বাচ্চচা ফুটানোর সময় হতো, চিকরারো, শালিক, টিয়া, ঘুঘু, ময়না এমনকি আরো অনেক পাখিই বাচ্চা ফুটায়। পাখি পোষার প্রতি এতোটাই আকৃষ্ট ছিলাম যে স্কুল ছুটি হলে বাড়িতে গিয়ে বইয়ের ব্যাগ রেখে স্কুল ড্রেস না খুলেই বা কখনো খুলেই দৌড় দিতাম খাওয়া দাওয়া ফেলে পাখি ধরার জন্য আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলো পূর্বে সোনাছড়া চা বাগান রয়েছে, ঐ চা বাগানে কালা কড়ই, সাদা কড়ই গাছে, চিকরারো, শালিক বাসা বুনতো, ময়না, টিয়া এগুলো পাহাড়ের খুব গহীনে বাসা বুনতো আবার কখনো চা বাগানেই, ময়না টিয়া পাখিগুলোরা বাসায় আবার সাপ থাকতো যার কারনে ভয় ও পেতাম এই দুটো পাখির বাসা থেকে বাচ্চা খুলতে। কখনও দেখাও হয়নি ময়না, টিয়া পাখি বাসা বাগানের গাছগুলাতে,তবে বাগানে উড়তে দেখতাম আর পিছু পিছু দৌড় দিতাম কোথায় গিয়ে কোন গাছে বসে সেটা দেখার জন্য, যে গাছে গিয়ে বসবে সে গাছেই তার বাসা হবে ভেবে। ময়না বা টিয়া কখনও পোষা ও হয়নি, তো যখন ঝড় হতো পাখির বাসা এমনি তুফানে ভেঙ্গে পড়ে যেতো , বাগানে গেলেই দেখতে পেতাম তুফানের কারনে ভেঙ্গে পড়া পাখির বাসার বাচ্চারা উড়তে পারছে না তখন দৌড়াইয়ে ধরে নিতাম, কখনোও বা গ্রামেই পাখির বাচ্চা পাওয়া যেত, গ্রামের গাছগাছালিতে বাস করা পাখির বাচ্চাগুলো রাতের ঝড়ে বাসা ভেঙ্গে পড়ে যেত, ডানা ভেঙ্গে যেত । অনেক পাখির বাচ্চা পুষেছি তবে তা উড়ে বা কি করে চলে যেত বুঝতেই পারতাম না, রাত্রে খাইয়ে পিঞ্জিরায় রাখতাম সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম নাই।বাবা বলতেন কিরে কাইয়ুম তর এসব করার কি দরকার থাক না ওরা ওদের বাসায় ওদের মতো শুধুই কষ্ট করে আনিস কেনো আর ওদের কষ্ট দিস কেনো।মা বলতেন পারে না বাবা আমার, পাখির বাচ্চাদের ওদের বাসা থেকে আনলে পরে মা পাখিরা আল্লাহর কাছে বিচার দেয়,পারে না কোন মায়ের বুক খালি করে তার সন্তানকে চিনিয়ে আনতে, চঞ্চল মন কে শুনতো কার কথা। তবে দেখেছি পাখির বাসা ভেঙ্গে যখন বাচ্চাদের নিতাম তখন মা পাখি চিৎকার চেঁচামেচি করত,বাঁচায় বাঁচায় আমার বাচ্চদের হয়তো চিৎকার করে বলত। আসলে তখন বুঝতে পারতাম না এটা একটা পাখির সন্তান মায়ের সামনে কেড়ে নেওয়ার কান্না, মা অপারক, চাইলেই কিছুই করতে পারবে না এতো বড় একটা প্রাণীর সাথে। পারবে না সংগ্রাম, মোকাবেলা, বিদ্রোহ করতে।
তবে দেখেছি কাকের মতো ছোট একটা পাখি আছে যাকে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় পেঁচ কুন্দা বলি, যখন গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপে যখন খাল-বিল, ডোবা,পুকুর শুকিয়ে যায়, বৃষ্টির অভাবে যখন ফসল পুড়ে যায় ঠিক তখন বৃষ্টি হবার জন্য মেঘো মাঘো করা হতো, একটা চাউনিতে লাল মরিচ আর পেঁচ কুন্দা পাখির বাসা রেখে একটা ছোট উলঙ্গ বাচ্চা ছেলের মাথায় করে সাথে অনেক লোক মেঘো মাঘো এক ফু্ঁটো পানি দেও গো মাই, এক ফুটা পানির জন্য রৌদ্রে পুড়িয়া যাই, খালে নাই পানি দলে নাই পানি, আসমান ভাঙ্গিয়া পড়ে ফুঁটা ফুঁটা পানি।এই গান গাওয়া হতো আর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চাউল তুলা প্রতিটা ঘর থেকে, চাউল তুলা শেষ হলে পেঁচ কুন্দা পাখির বাসা এক ডুবে পানির মধ্যে পুতে দিতে হয়।জমাকৃত চাউল একত্র করে বেঁচে টাকা দিয়ে খিঁচুড়ি করা হতো, মসজিদের ইমাম সাহেবকে এনে দোয়া করানো হতো, ইমাম সাহেব বৃষ্টি হবার জন্য দোয়া করতেন, দোয়া শেষে খিঁচুড়ি বিতরণ করা হতো, তখন পেঁচ কুন্দা পাখির বাসা খুললে পরে পেঁচ কুন্দা মা পাখি এসে মাথায় কামড় দিতো। ভাবতো তার বাচ্চাদের নিয়ে যাবো। আহা কোথায় হারিয়ে গেলো সেইদিনগুলি। কতো না ভালো লাগা কাজ করত, কত না সুন্দর প্রফুল্লতা ছড়ানো ছিলো সেই ছোটবেলা আজ তা বিলুপ্তপ্রায়! আসল কথায় আসি তো একবার একটা শালিক পাখির বাচ্চা কার কাছ থেকে জানি ৬০টাকা দিয়ে কিনেছিলাম তা ঠিক বলতে পারছি না। আমি তো আর ছলিম (পাখি বিঙ্গানী)ছিলাম না তবুও ছোট মস্তিষ্কে যতটুক ঙ্গান ছিলো তা চালিয়ে দিতাম, পাখি পোষার নিয়ম হচ্ছে আপনাকে বাচ্চা পাখি পোষতে হবে, মায়ের ভাষা, পাখিটা যখন বাচ্চা থাকবে তখন তার মায়ের কথা শুনতে পাবে না কাঁন না ফুঁটা পর্যন্ত, ভাষা ও বুঝতে পারবে না। ধরুন আপনার একটা ছেলে সন্তান হলো ওর বয়স চার কিংবা পাঁচ ঐ বয়সে সে কথা বলতে পারে না আপনি তাকে আমেরিকা পাঠিয়ে দিলেন। এখন ১৫ বছর পর দেশে এসে সে কি আপনাকে চিনবে বা বাংলা ভাষা না জানলে আপনি যদি বলেন আমি তোমার বাবা তখন কি সে কিছু বুঝবে?না বুঝবে না কেননা সে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে আমেরিকাতে থাকায়। তাই আপনি বাবা বাবা তোমার বললে ও সে কিছু বুঝবে না, বরং মেন্টাল ভাববে, ঠিক তেমনি একটা বাচ্চা পাখি পোষলে সে পাখি বড় হলে পাখির ভাষা বুঝবে না, আপনি ছোট থেকে বড় করেছেন আপনার ভাষা বাবা ইশার ইঙ্গিত বুঝবে। পাখিরা যখন বাচ্চা ফুটায় তখন কিন্তু নিজেদের খাওয়া দাওয়া ভুলে বাচ্চাদের খাওয়ায়, তবে পাখিরা আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাচ্চাদের লালন পালপন করে তারপর আলাদা করে দেয় বলে বড় হয়েছো নিজে খাবার খেতে পারো নিজে সংগ্রহ করে খাও। কিন্তু আমরা মানু্ষের মধ্যে বাবা- মা ছেলে -মেয়ে নিজে কিছু একটা না করতে পারলে ও খেতে পারে ঠিকি কিন্তু তবুও বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের দূর করে দেন না। মায়া সন্তানের প্রতি, এজন্যই হয়তো মানুষ শ্রেষ্ঠ জীবন, কেননা তার নিজেকে সে নিয়ন্ত্রণ করে চলতে পারে অন্যদের নিয়ে সাথে শত বিপদআপদে। একটা জীবের দায়িত্ব নেওয়াটা কিন্তু চাটটিখানি কথা না, একটা বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে থেকে এনে তাকে খাবার না দিলে কিন্তু আপনাকে একদিন এর জবাবদিহি করতে হবে। একটা জীবকে যদি তুমি খাওয়াতে বা যত্ন নাই নিতে পারো তবে কেনো দায়িত্ব নিলা। বাচ্চা পাখিটা কে ঠিকমতো খাবার না দিলে বদদোয়া দিবে। পিঞ্জিরার কাছে গেলেই নড়া পেয়ে মুখ হা করত। ওর মা ওকে খবার একটা দিলে ও আরো চাইলে হতো দিতো না অন্য বাচ্চাদের দিতে, আর একটু বড় হলে বলতো যা তুই নিজে নিজের খাবার খুজে খা, আমি তকে খাওয়াতে পারবো না, একটা মুরগিকে লক্ষ্য করলে তা বুঝা যায়, মুরগির বাচ্চারা যখন একটু বড় হয় তখন মায়ের সাথে তার চেয়ে আরে ছোট বাচ্চাদের সাখে খেতে আসলে মুরগিটা যে তাড়িয়ে দেয় তাতেই বুঝা যায় মুুরগি বলে তুই নিজে খেতে পারিস এখানে আবার এসেছিস কেনো যা ভ্যাগ তুই নিজে গিয়ে খুজে খা। আর আপনি ছোট থেকে বড় করবেন একটা বাচ্চাকে তখন আপনাকে কি ভুলতে পারে। পিঞ্জিরার তলে খড়কুটো দিয়ে রাখতাম শালিক পাখিটাকে, ঘন্টায় ঘন্টায় খাবার দিতাম। ভাত, চালের খুদ দাঁত দিয়ে ভেঙ্গে চিবিয়ে খাওয়াতাম, বিস্কুট, শয়তান পোকা, ঘাস ফরিঙ্গ এমনকি গরুর দুধ ও খাওয়াতাম। ফরিঙ্গ যেদিন এনে খাওয়াতাম আনন্দে লাফাত পাকনা মেলে প্রিয় আর ভালো খাবার পেয়ে হয়তো। আমাদের মধ্যে দেখেন হঠাৎ করে যখন গরুর মাংস নিয়ে আসেন বাবা তখন ছোট ছেলে মেয়েগুলো আনন্দে নেচে বলে গরুর মাংস আজ খাবোরে। বুঝলাম শালিকটাও ঠিক এমনটাই আনন্দে নেচে ওঠে হয়তো। একটা সময় পাখিটার হলো কাঁন ফুঁটলো, বড় হলো উড়াল ও দিতে পারতো, কোথাও গেলে আমার কাধে উড়াল দিয়ে বসে পড়তো। অন্য কারো কাছে যেতো না বসতোও না। টিয়া পাখির মতো শালিক পাখিও কথা বুঝে, আবার বলার ও চেষ্টা করে ঠোট নেড়ে।বনে ধান কাটলে ধানের ন্যাড়াতে অনেক শয়তান পোকাও ঘাস ফরিঙ্গ দেখা যায়, একদিন বনে নিয়ে গেলাম ঘাস ফরিঙ্গ খাওয়ানোর জন্য। পোষ মেনেছিলো কোথাও যেতো না তাই মুক্ত ছেড়ে দিতাম, যখন ঘাস ফরিঙ্গ ধরে ধরে খাচ্ছিলো হঠাৎ করে একটা শালিক পাখি উড়ে এসে আমার শালিক পাখিটার কাছে বসলো, মাথা নাড়িয়ে কি যেনো বলছে , আমি ভাবলাম কিরে কি করে ঐ পাখিটা প্রেমে ফেলিয়ে দেয় কিনা? নাকি বুঝিয়ে নিয়ে যাবার কথা বলছে।কি হলো তাদের মধ্যে কথাকলি বুঝার উপায় নেই তাই বুঝতেও পারলাম না। আমি কাছে গেলে ঐ পাখিটা উড়ে যায়।তারপর বাড়িতে নিয়ে রেখে স্কুলে চলে যাই, স্কুল থেকে যখন বাড়িতে আসলাম তখন আবার দেখলাম ঐ পাখিটা আমার শালিকের সাথে আছে, চিন্তায় পড়ে গেলাম, যদি নিয়ে যায় প্রেমে ফেলিয়ে। আমাকে দেখে আবার ও চলে গেলো।এইভাবে প্রায় পনেরো দিন একসাথে দেখলে আমি ঐ শালিকটাকে ঢিল মেরে উড়িয়ে দিতাম, এভাবে একদিন বুঝিয়ে ঐ শালিকটা আমার শালিকটাকে নিয়ে যায়। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।এতো দিনের পোষা পাখিটা এভাবে চলে গেলো এতো মায়া করেছি যে পাখিটারে। ভুলতেই পারছিলাম না, তাই আজ ১২ বছরকানেক পর এসেও লিখতে পারছি।খুব কষ্ট আর মন খারাপ হয়েছিলো। তো পাখিটা চলে যাওয়া দুইটা কারন বুঝতে পারলাম।১. পাখিটার দেখতে তার মতো একজন সঙ্গি প্রয়োজন ছিলো, পেয়েও ছিলো তাই চলে গেলো।২. ঐ পাখিটা হয়তো বুঝিয়ে বা নিজেই বুঝেছে যে আমি নিজেই শিকার ধরে খেতে পারি তাহলে অন্যের উপর নির্ভর কেনো থাকবো, কেনো পরাধীন থাকবো। বাবারা ছেলেদের পেলে পোষে ছোট বেলা থেকে লালনপালন করে বড় করলে পরে নিজেরে যখন উপার্জন করতে পারে তখন বাবাকে অনেকে ব্যাঙ্গ দেখিয়ে চলে যায় ঠিক তেমনটা।~ আব্দুল কাইয়ুম(প্রিয়ম)পোষা শালিকছোটবেলায় পাখি পোষার খুব ইচ্ছে ছিলো, এখনোও যে নেই ঠিক তা না। একটু চঞ্চলমুখা ছিলাম, এই যখন সময় বৈশাখ মাসের উত্তর পশ্চিম কালো মেঘ ঝড়ো বাতাস বয়ে যাওয়া একটা সময় প্রচন্ড ঝড়ের সহীত বৃষ্টি হয়। ঠিক এই ঋতুতে পাখিদের বাচ্চচা ফুটানোর সময় হতো, চিকরারো, শালিক, টিয়া, ঘুঘু, ময়না এমনকি আরো অনেক পাখিই বাচ্চা ফুটায়। পাখি পোষার প্রতি এতোটাই আকৃষ্ট ছিলাম যে স্কুল ছুটি হলে বাড়িতে গিয়ে বইয়ের ব্যাগ রেখে স্কুল ড্রেস না খুলেই বা কখনো খুলেই দৌড় দিতাম খাওয়া দাওয়া ফেলে পাখি ধরার জন্য আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলো পূর্বে সোনাছড়া চা বাগান রয়েছে, ঐ চা বাগানে কালা কড়ই, সাদা কড়ই গাছে, চিকরারো, শালিক বাসা বুনতো, ময়না, টিয়া এগুলো পাহাড়ের খুব গহীনে বাসা বুনতো আবার কখনো চা বাগানেই, ময়না টিয়া পাখিগুলোরা বাসায় আবার সাপ থাকতো যার কারনে ভয় ও পেতাম এই দুটো পাখির বাসা থেকে বাচ্চা খুলতে। কখনও দেখাও হয়নি ময়না, টিয়া পাখি বাসা বাগানের গাছগুলাতে,তবে বাগানে উড়তে দেখতাম আর পিছু পিছু দৌড় দিতাম কোথায় গিয়ে কোন গাছে বসে সেটা দেখার জন্য, যে গাছে গিয়ে বসবে সে গাছেই তার বাসা হবে ভেবে। ময়না বা টিয়া কখনও পোষা ও হয়নি, তো যখন ঝড় হতো পাখির বাসা এমনি তুফানে ভেঙ্গে পড়ে যেতো , বাগানে গেলেই দেখতে পেতাম তুফানের কারনে ভেঙ্গে পড়া পাখির বাসার বাচ্চারা উড়তে পারছে না তখন দৌড়াইয়ে ধরে নিতাম, কখনোও বা গ্রামেই পাখির বাচ্চা পাওয়া যেত, গ্রামের গাছগাছালিতে বাস করা পাখির বাচ্চাগুলো রাতের ঝড়ে বাসা ভেঙ্গে পড়ে যেত, ডানা ভেঙ্গে যেত । অনেক পাখির বাচ্চা পুষেছি তবে তা উড়ে বা কি করে চলে যেত বুঝতেই পারতাম না, রাত্রে খাইয়ে পিঞ্জিরায় রাখতাম সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম নাই।বাবা বলতেন কিরে কাইয়ুম তর এসব করার কি দরকার থাক না ওরা ওদের বাসায় ওদের মতো শুধুই কষ্ট করে আনিস কেনো আর ওদের কষ্ট দিস কেনো।মা বলতেন পারে না বাবা আমার, পাখির বাচ্চাদের ওদের বাসা থেকে আনলে পরে মা পাখিরা আল্লাহর কাছে বিচার দেয়,পারে না কোন মায়ের বুক খালি করে তার সন্তানকে চিনিয়ে আনতে, চঞ্চল মন কে শুনতো কার কথা। তবে দেখেছি পাখির বাসা ভেঙ্গে যখন বাচ্চাদের নিতাম তখন মা পাখি চিৎকার চেঁচামেচি করত,বাঁচায় বাঁচায় আমার বাচ্চদের হয়তো চিৎকার করে বলত। আসলে তখন বুঝতে পারতাম না এটা একটা পাখির সন্তান মায়ের সামনে কেড়ে নেওয়ার কান্না, মা অপারক, চাইলেই কিছুই করতে পারবে না এতো বড় একটা প্রাণীর সাথে। পারবে না সংগ্রাম, মোকাবেলা, বিদ্রোহ করতে। তবে দেখেছি কাকের মতো ছোট একটা পাখি আছে যাকে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় পেঁচ কুন্দা বলি, যখন গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপে যখন খাল-বিল, ডোবা,পুকুর শুকিয়ে যায়, বৃষ্টির অভাবে যখন ফসল পুড়ে যায় ঠিক তখন বৃষ্টি হবার জন্য মেঘো মাঘো করা হতো, একটা চাউনিতে লাল মরিচ আর পেঁচ কুন্দা পাখির বাসা রেখে একটা ছোট উলঙ্গ বাচ্চা ছেলের মাথায় করে সাথে অনেক লোক মেঘো মাঘো এক ফু্ঁটো পানি দেও গো মাই, এক ফুটা পানির জন্য রৌদ্রে পুড়িয়া যাই, খালে নাই পানি দলে নাই পানি, আসমান ভাঙ্গিয়া পড়ে ফুঁটা ফুঁটা পানি।এই গান গাওয়া হতো আর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চাউল তুলা প্রতিটা ঘর থেকে, চাউল তুলা শেষ হলে পেঁচ কুন্দা পাখির বাসা এক ডুবে পানির মধ্যে পুতে দিতে হয়।জমাকৃত চাউল একত্র করে বেঁচে টাকা দিয়ে খিঁচুড়ি করা হতো, মসজিদের ইমাম সাহেবকে এনে দোয়া করানো হতো, ইমাম সাহেব বৃষ্টি হবার জন্য দোয়া করতেন, দোয়া শেষে খিঁচুড়ি বিতরণ করা হতো, তখন পেঁচ কুন্দা পাখির বাসা খুললে পরে পেঁচ কুন্দা মা পাখি এসে মাথায় কামড় দিতো। ভাবতো তার বাচ্চাদের নিয়ে যাবো। আহা কোথায় হারিয়ে গেলো সেইদিনগুলি। কতো না ভালো লাগা কাজ করত, কত না সুন্দর প্রফুল্লতা ছড়ানো ছিলো সেই ছোটবেলা আজ তা বিলুপ্তপ্রায়! আসল কথায় আসি তো একবার একটা শালিক পাখির বাচ্চা কার কাছ থেকে জানি ৬০টাকা দিয়ে কিনেছিলাম তা ঠিক বলতে পারছি না। আমি তো আর ছলিম (পাখি বিঙ্গানী)ছিলাম না তবুও ছোট মস্তিষ্কে যতটুক ঙ্গান ছিলো তা চালিয়ে দিতাম, পাখি পোষার নিয়ম হচ্ছে আপনাকে বাচ্চা পাখি পোষতে হবে, মায়ের ভাষা, পাখিটা যখন বাচ্চা থাকবে তখন তার মায়ের কথা শুনতে পাবে না কাঁন না ফুঁটা পর্যন্ত, ভাষা ও বুঝতে পারবে না। ধরুন আপনার একটা ছেলে সন্তান হলো ওর বয়স চার কিংবা পাঁচ ঐ বয়সে সে কথা বলতে পারে না আপনি তাকে আমেরিকা পাঠিয়ে দিলেন। এখন ১৫ বছর পর দেশে এসে সে কি আপনাকে চিনবে বা বাংলা ভাষা না জানলে আপনি যদি বলেন আমি তোমার বাবা তখন কি সে কিছু বুঝবে?না বুঝবে না কেননা সে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে আমেরিকাতে থাকায়। তাই আপনি বাবা বাবা তোমার বললে ও সে কিছু বুঝবে না, বরং মেন্টাল ভাববে, ঠিক তেমনি একটা বাচ্চা পাখি পোষলে সে পাখি বড় হলে পাখির ভাষা বুঝবে না, আপনি ছোট থেকে বড় করেছেন আপনার ভাষা বাবা ইশার ইঙ্গিত বুঝবে। পাখিরা যখন বাচ্চা ফুটায় তখন কিন্তু নিজেদের খাওয়া দাওয়া ভুলে বাচ্চাদের খাওয়ায়, তবে পাখিরা আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাচ্চাদের লালন পালপন করে তারপর আলাদা করে দেয় বলে বড় হয়েছো নিজে খাবার খেতে পারো নিজে সংগ্রহ করে খাও। কিন্তু আমরা মানু্ষের মধ্যে বাবা- মা ছেলে -মেয়ে নিজে কিছু একটা না করতে পারলে ও খেতে পারে ঠিকি কিন্তু তবুও বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের দূর করে দেন না। মায়া সন্তানের প্রতি, এজন্যই হয়তো মানুষ শ্রেষ্ঠ জীবন, কেননা তার নিজেকে সে নিয়ন্ত্রণ করে চলতে পারে অন্যদের নিয়ে সাথে শত বিপদআপদে। একটা জীবের দায়িত্ব নেওয়াটা কিন্তু চাটটিখানি কথা না, একটা বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে থেকে এনে তাকে খাবার না দিলে কিন্তু আপনাকে একদিন এর জবাবদিহি করতে হবে। একটা জীবকে যদি তুমি খাওয়াতে বা যত্ন নাই নিতে পারো তবে কেনো দায়িত্ব নিলা। বাচ্চা পাখিটা কে ঠিকমতো খাবার না দিলে বদদোয়া দিবে। পিঞ্জিরার কাছে গেলেই নড়া পেয়ে মুখ হা করত। ওর মা ওকে খবার একটা দিলে ও আরো চাইলে হতো দিতো না অন্য বাচ্চাদের দিতে, আর একটু বড় হলে বলতো যা তুই নিজে নিজের খাবার খুজে খা, আমি তকে খাওয়াতে পারবো না, একটা মুরগিকে লক্ষ্য করলে তা বুঝা যায়, মুরগির বাচ্চারা যখন একটু বড় হয় তখন মায়ের সাথে তার চেয়ে আরে ছোট বাচ্চাদের সাখে খেতে আসলে মুরগিটা যে তাড়িয়ে দেয় তাতেই বুঝা যায় মুুরগি বলে তুই নিজে খেতে পারিস এখানে আবার এসেছিস কেনো যা ভ্যাগ তুই নিজে গিয়ে খুজে খা। আর আপনি ছোট থেকে বড় করবেন একটা বাচ্চাকে তখন আপনাকে কি ভুলতে পারে। পিঞ্জিরার তলে খড়কুটো দিয়ে রাখতাম শালিক পাখিটাকে, ঘন্টায় ঘন্টায় খাবার দিতাম। ভাত, চালের খুদ দাঁত দিয়ে ভেঙ্গে চিবিয়ে খাওয়াতাম, বিস্কুট, শয়তান পোকা, ঘাস ফরিঙ্গ এমনকি গরুর দুধ ও খাওয়াতাম। ফরিঙ্গ যেদিন এনে খাওয়াতাম আনন্দে লাফাত পাকনা মেলে প্রিয় আর ভালো খাবার পেয়ে হয়তো। আমাদের মধ্যে দেখেন হঠাৎ করে যখন গরুর মাংস নিয়ে আসেন বাবা তখন ছোট ছেলে মেয়েগুলো আনন্দে নেচে বলে গরুর মাংস আজ খাবোরে। বুঝলাম শালিকটাও ঠিক এমনটাই আনন্দে নেচে ওঠে হয়তো। একটা সময় পাখিটার হলো কাঁন ফুঁটলো, বড় হলো উড়াল ও দিতে পারতো, কোথাও গেলে আমার কাধে উড়াল দিয়ে বসে পড়তো। অন্য কারো কাছে যেতো না বসতোও না। টিয়া পাখির মতো শালিক পাখিও কথা বুঝে, আবার বলার ও চেষ্টা করে ঠোট নেড়ে।বনে ধান কাটলে ধানের ন্যাড়াতে অনেক শয়তান পোকাও ঘাস ফরিঙ্গ দেখা যায়, একদিন বনে নিয়ে গেলাম ঘাস ফরিঙ্গ খাওয়ানোর জন্য। পোষ মেনেছিলো কোথাও যেতো না তাই মুক্ত ছেড়ে দিতাম, যখন ঘাস ফরিঙ্গ ধরে ধরে খাচ্ছিলো হঠাৎ করে একটা শালিক পাখি উড়ে এসে আমার শালিক পাখিটার কাছে বসলো, মাথা নাড়িয়ে কি যেনো বলছে , আমি ভাবলাম কিরে কি করে ঐ পাখিটা প্রেমে ফেলিয়ে দেয় কিনা? নাকি বুঝিয়ে নিয়ে যাবার কথা বলছে।কি হলো তাদের মধ্যে কথাকলি বুঝার উপায় নেই তাই বুঝতেও পারলাম না। আমি কাছে গেলে ঐ পাখিটা উড়ে যায়।তারপর বাড়িতে নিয়ে রেখে স্কুলে চলে যাই, স্কুল থেকে যখন বাড়িতে আসলাম তখন আবার দেখলাম ঐ পাখিটা আমার শালিকের সাথে আছে, চিন্তায় পড়ে গেলাম, যদি নিয়ে যায় প্রেমে ফেলিয়ে। আমাকে দেখে আবার ও চলে গেলো।এইভাবে প্রায় পনেরো দিন একসাথে দেখলে আমি ঐ শালিকটাকে ঢিল মেরে উড়িয়ে দিতাম, এভাবে একদিন বুঝিয়ে ঐ শালিকটা আমার শালিকটাকে নিয়ে যায়। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।এতো দিনের পোষা পাখিটা এভাবে চলে গেলো এতো মায়া করেছি যে পাখিটারে। ভুলতেই পারছিলাম না, তাই আজ ১২ বছরকানেক পর এসেও লিখতে পারছি।খুব কষ্ট আর মন খারাপ হয়েছিলো। তো পাখিটা চলে যাওয়া দুইটা কারন বুঝতে পারলাম।১. পাখিটার দেখতে তার মতো একজন সঙ্গি প্রয়োজন ছিলো, পেয়েও ছিলো তাই চলে গেলো।২. ঐ পাখিটা হয়তো বুঝিয়ে বা নিজেই বুঝেছে যে আমি নিজেই শিকার ধরে খেতে পারি তাহলে অন্যের উপর নির্ভর কেনো থাকবো, কেনো পরাধীন থাকবো। বাবারা ছেলেদের পেলে পোষে ছোট বেলা থেকে লালনপালন করে বড় করলে পরে নিজেরে যখন উপার্জন করতে পারে তখন বাবাকে অনেকে ব্যাঙ্গ দেখিয়ে চলে যায় ঠিক তেমনটা।~ আব্দুল কাইয়ুম(প্রিয়ম)
You must be logged in to post a comment.