“ভালোবাসা” মহান আল্লাহতায়ালার এক বড় নেয়ামত। এ নেয়ামতের কেউ সুষ্ঠু ব্যবহার করে, আবার কেউ অপব্যবহার করে। প্রকৃত ভালোবাসার মাঝেই দুনিয়া ও আখেরাতে মহান কল্যাণ নিহিত রেখেছে। সৃষ্টির আত্মপ্রকাশই হলো ভালোবাসা। পানি থেকে ঢেউ, ঢেউ থেকে ফেনা, আর ফেনা থেকে মৃত্তিকা আর মৃত্তিকা থেকেই ধরাপৃষ্ট !!! কোন গুঞ্জনে, কোন জিকিরে, কোন মহব্বতে এ সৃষ্টি আশেক আর মাশুকরা সেটা উপলব্ধী করতে পারে। ভালোবাসার অপব্যবহার করলে জান্নাতি পোষাক দেহে থাকবেনা, পাবেওনা। এ ভালোবাসা শুধু সৃষ্টিকর্তাকে রাজি খুশির জন্য হতে হবে। আদম সন্তানেরা ভালোবাসার অপব্যবহার করলে তাদের পরিণতি সুখময় স্থান হবে না। ভালোবাসার অপসংস্কৃতি আমাদেরকে গ্রাস করেছে। তাই সঠিক তথ্য না জেনে মানুষ বিপথগামী হচ্ছে।
‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস প্রাচীন। এর সূচনা প্রায় ১৭শ’ বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালবাসা’র মধ্য দিয়ে। এর সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল, যা পরবর্তীতে রোমীয় খৃষ্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়। ভ্যালেনটাইন ডে সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়।
১. রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন সম্রাটের খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আহবান প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
২. ১৪ই ফেব্রুয়ারী রোমকদের লেসিয়াস দেবীর পবিত্র দিন। এদিন তিনি দু’টি শিশুকে দুধ পান করিয়েছিলেন। যারা পরবর্তীতে রোম নগরীর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
৩. ১৪ই ফেব্রুয়ারী রোমানদের বিবাহ দেবী ‘ইউনু’-এর বিবাহের পবিত্র দিন।
৪. রোম সম্রাট ক্লডিয়াস তার বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে গিয়ে যখন এতে বিবাহিত পুরুষদের অনাসক্ত দেখেন, তখন তিনি পুরুষদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ করে ফরমান জারি করেন। কিন্তু জনৈক রোমান বিশপ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এটাকে প্রত্যাখ্যান করেন ও গোপনে বিয়ে করেন। সম্রাটের কানে এ সংবাদ গেলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সেদিন থেকে দিনটি ভালবাসা দিবস হিসাবে কিংবা এ ধর্মযাজকের নামানুসারে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
‘ভালবাসা দিবস’কে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী উত্তাল হয়ে উঠে। বাজারে নানাবিধ উপহারে ভর্তি। পার্ক ও হোটেল- রেস্তোরাঁগুলো সাজানো হয় নতুন সাজে। পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরেই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-কে ঘিরে পড়ে গেছে সাজ সাজ রব। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এখন ঐ অপসংস্কৃতির মাতাল ঢেউ লেগেছে। হৈ চৈ, উন্মাদনা, ঝলমলে উপহার সামগ্রী, প্রেমিক যুগলের চোখে মুখে বিরাট উত্তেজনা। হিংসা-হানাহানির যুগে ভালবাসার এই দিনকে! প্রেমিক যুগল তাই উপেক্ষা করে সব চোখ রাঙানি। তাইতো গোপালগঞ্জে প্রেমিকা মারা যাওয়ার পর তার কবরের পাশে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে প্রেমিক।
আমাদের দেশে ভ্যালেনটাইন’স ডে আমদানি হয় ১৯৯৩ সাল। পরের বছর থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে পালন শুরু হয়। কালক্রমে তা সংক্রমিত হতে থাকে যুব সমাজের মধ্যে। পশ্চিমা দেশে বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যেও এ দিবসের প্রভাব নমনীয়। কারণ সেখানে ‘ভালোবাসার’ বড়ই আকাল। দাম্পত্য জীবনে সুখের ছোঁয়া নেহায়েত কম, যা আছে তা কেবলি ভোগ-লালসার। আমাদের দেশে পারিবারিক বন্ধন ঐতিহ্যগতভাবেই দৃঢ়। অবশ্য উত্তর-আধুনিককালে এসে সেখানে চির ধরছে। তাই বুঝি চিরন্তন ভালোবাসার অনুপস্থিতিতে মেকি ভালোবাসার অভিনয় করার জন্য একটি দিনকে বেছে নেয় কেউ কেউ। ভালোবাসা পবিত্র, ভালোবাসা শাশ্বত-এ আর নতুন কোন কথা নয়, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জাহির করারও কোন বিষয় নয়। যখন দেখা যায় ফেব্র“য়ারীর চৌদ্দ তারিখে তরুণ-তরুণীরা পরস্পরকে ফুল দেয়, প্রকাশ্য চুমু বিনিময় করে, তখন অনুমান করা ভুল হবে না যে, সে ভালোবাসায় ভেজাল রয়েছে। এতে রয়েছে শুধু সম্ভোগের সুপ্ত বাসনা। যে ভালোবাসা একান্তের তার প্রকাশ কেন ঘটবে রমনা পার্কে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জিয়া উদ্যানে কিংবা সংসদ ভবন চত্বরে?
মূলত আল্লাহ প্রদত্ত ভালোবাসাকে নির্দিষ্ট কোন দিনের সাথে সম্পৃক্ত করে তা মাঠে-ময়দানে প্রকাশ করার মতো রীতিনীতি পরিহার করে ভালোবাসার এ মহান গুণটিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) নির্দেশিত পন্থায় প্রয়োগ করে পৃথিবীকে শান্তির আভাসভূমি রূপে গড়ে তোলা মানবতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
রোমান সম্রাট আরলিয়ানের সময় ১৯৯৭ সালের ১৪ ফের্রুয়ারী ধর্মযাজক ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’ মারা গেলে তার সমাধিতে হাজার হাজার ভক্ত ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ ফুল দেয়। সেখানে ফুল দিতে এসে নির্জনতায় অনেকেই কাম-সুখ লাভ করতো। আবার কেউ বলে, ১৪ ফের্রুয়ারী ইতালির তরুণীরা সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে তাকিয়ে থাকতো জানালার দিকে। সে জানালা দিয়ে প্রথমেই যে যুবককে দেখতো তাকেই বন্ধু হিসেবে বেছে নিতো, তখন উভয়ের মধ্যে যৌন সম্পর্কও ছিল সিদ্ধ। ইচ্ছে করলে তারা পরস্পরকে বিয়ে করতে পারতো।
ভালবাসার পরিচয় ‘ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ভালবাসা’ শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তা‘আলা সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
‘‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’(সূরা আল-বাকারা:১৯৫)
ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা এ দুটিই ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালবাসেন। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’’(সূরা আল-বাকারা:২২২)
তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুবই ভালবাসেন। তিনি বলেন,فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِين
‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’’
Огляд ВБЕТ UA 2023. VBET UKRAINE POMOCODES та BONUS на v-bet.biz.ua. Заходьте, реєстрація в Україні. Все, що вам потрібно для успішної гри з V -BET Casino!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.